Where is the world conscience about the barbarous tortured the Rohingyas?
সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমারের বর্বর নির্যাতন-নিপীড়নের
ঘটনায় এক রকম ‘নীরব দর্শকের ভূমিকা’য় অবতীর্ণ হয়েছে বিশ্ববিবেক। রাখাইন
প্রদেশে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে মিয়ানমারের
সেনাবাহিনী। লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণের ঘটনায় লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে
পালাচ্ছেন। সর্বস্ব হারিয়ে ইতিমধ্যেই কয়েক হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও
শিশু বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। অনুপ্রবেশের লক্ষ্যে বিপুলসংখ্যক নির্যাতিত
অসহায় রোহিঙ্গা সীমান্ত এলাকায় জড়ো হয়েছেন।
এমন মানবিক বিপর্যয়েও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোও এক রকম নিশ্চুপ। তাদের কেউ কেউ দায়সারা গোছের প্রতিবাদ জানিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্রই প্রশ্ন করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউ, ওআইসি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসহ বিশ্ববিবেক আজ কোথায়? ইউএনএইচসিআর, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ কয়েকটি সংস্থা মৃদু কণ্ঠে মিয়ানমারের নিষ্ঠুর নিপীড়নের ব্যাপারে উদ্বেগ জানালেও তাতে কোনো সাড়া মিলছে না। পাশাপাশি এসব সংস্থা বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দিতেও বলছে। কিন্তু বাংলাদেশে থাকা কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর কোনো চাপ দিচ্ছে না তারা।
তবে কোনো কোনো আন্তর্জাতিক মহল অবশ্য মিয়ানমারের চলমান সেনা অভিযানে মানবাধিকারের চরম লংঘন ও মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ তুলেছে। রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের দমন-পীড়নের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। বুধবার ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মিয়ো মিন্ট থানকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে এই প্রতিবাদ জানানো হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপক্ষীয় ও কনস্যুলার) কামরুল আহসান মিয়ানমারে রাষ্ট্রদূতকে নির্যাতনের ঘটনায় বাংলাদেশের উদ্বেগের কথা জানিয়ে অবিলম্বে তা বন্ধ করার আহ্বান জানান।
এদিকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের হত্যা, বাড়িঘর লুট, অগ্নিসংযোগ এমনকি ধর্ষণের মতো ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ড সতর্ক প্রহরা দিচ্ছে। তবুও দলে দলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছেন বিপন্ন রোহিঙ্গারা। তাদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছেন। এই পরিস্থিতির মধ্যেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রায় নির্বিকার। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশকে সীমান্ত খুলে দেয়ার আহ্বান ছাড়া সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেছেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরেই রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান হতে হবে।
সীমান্ত চৌকিতে গত ৯ অক্টোবর এক সমন্বিত হামলায় মিয়ানমারের নয়জন বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ও সেনাবাহিনীর পাঁচজন সদস্য নিহত হওয়ার পর অভিযানে নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এ অভিযানে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ৬৯ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে বলে স্বীকার করলেও নিহতের প্রকৃত সংখ্যা শত শত বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। ওই অঞ্চলে সাংবাদিক ও ত্রাণকর্মীদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করেছে মিয়ানমার সরকার। তবুও বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরের বরাত দিয়ে একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, উত্তরাঞ্চলীয় গ্রামগুলোতে অন্তত নয়জন রোহিঙ্গাকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। শত শত রোহিঙ্গা প্রাণভয়ে নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে পালাচ্ছেন। নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে তিন শতাধিক রোহিঙ্গাকে পুশব্যাক করেছে বিজিবি। তবুও খোলা সীমান্ত দিয়ে এক শ্রেণীর দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছেন রোহিঙ্গারা। এ পর্যন্ত কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছেন বলে জানা গেছে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক আগেই স্থগিত করেছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হলে দুপুর ২টার পরেই রাষ্ট্রদূত মিয়ো মিন্ট থান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হাজির হন। বেলা ৩টা ১০ মিনিটের দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল আহসানের কক্ষে যান মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত। এ সময় কামরুল আহসান ছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ডেস্কের মহাপরিচালক মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরী ও পরিচালক কাজী এহসানুল হক উপস্থিত ছিলেন। প্রায় পঞ্চাশ মিনিট আলোচনার পর মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মিয়ো মিন্ট থান বেরিয়ে যাওয়ার সময় রাখাইন রাজ্যে হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা না বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ত্যাগ করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল আহসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সীমান্তের ওপারে যেসব ঘটনা ঘটছে সে ব্যাপারে আমরা আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। আমরা দাবি করেছি যে, তারা যেন এমন পরিবেশ সৃষ্টি করেন যাতে জনগণ তাদের নিজ গ্রামে ফিরে যেতে পারেন। ভবিষ্যতে যেন লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং ধর্ষণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। এটাই আমাদের অবস্থান।’ জবাবে রাষ্ট্রদূত কী বলেছেন জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘তারা যথারীতি বলেছেন, মিডিয়ায় আসা এসব খবর বানোয়াট। তবে আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের কাছে প্রতিবাদপত্র তুলে দিয়েছি।’ রাষ্ট্রদূত তার দেশের কর্তৃপক্ষের কাছে তা জানাবেন বলে বৈঠকে জানান। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতনের যেসব ছবি প্রকাশিত হয়েছে তা মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের কাছে তুলে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর চলমান অ্যাকশনের ফলে পরিস্থিতি অব্যাহতভাবে অবনতি হওয়ায় বৈঠকে কামরুল আহসান বাংলাদেশের গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। মিয়ানমারের এই পদক্ষেপের ফলে প্রাণঘাতী ঘটনা ঘটছে এবং বাংলাদেশের ওপর তার প্রভাব পড়ছে।
সচিব (দ্বিপক্ষীয় ও কনস্যুলার) মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে এ কথা জানান যে, রাখাইন রাজ্যের বিপর্যস্ত মানুষ বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন। তারা মানবিক পরিস্থিতি থেকে নিরাপত্তা চেয়ে সীমান্তজুড়ে আশ্রয় খুঁজছেন। এসব মানুষের ঢল ঠেকাতে আমাদের বর্ডার গার্ডের আন্তরিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও নারী, শিশু, বয়স্ক মানুষসহ হাজার হাজার মিয়ানমারের নাগরিক সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছেন। সীমান্তে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। কামরুল আহসান রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের ঢল প্রতিরোধে মিয়ানমারের সহায়তা চেয়েছেন। তিনি এই ঘটনায় বাংলাদেশকে জড়িয়ে মিয়ানমারের গণমাধ্যমের সংবাদ পরিবেশনের যে প্রবণতা রয়েছে তারও প্রতিবাদ জানান।
সচিব (দ্বিপক্ষীয় ও কনস্যুলার) মিয়ানমারের চলমান সেনা অভিযানের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মানবাধিকার লংঘন ও নির্বিচারে বলপ্রয়োগের যে অভিযোগ উত্থাপন করেছে তা নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার সুপারিশ করেন। তিনি রাখাইন রাজ্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও উপযুক্ত বিচারব্যবস্থা চালুর সব রকম বাধা অপসারণের প্রতি জোর দেন।
মিয়ানমারেই সংকটের সমাধান চায় বাংলাদেশ : বাংলাদেশে নয়, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান এর উৎস মিয়ানমারের অভ্যন্তরে খুঁজতে হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক। বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিবাসনবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন জিএফএমডি’র প্রস্তুতি অবহিত করতে আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১০ ডিসেম্বর তিন দিনব্যাপী গ্লোবাল ফোরাম ফর মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (জিএফএমডি) সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। এতে বিশ্বের ৭৩টি দেশের ২০ জন মন্ত্রীসহ সরকারি-বেসরকারি প্রায় সাড়ে ৫শ’ প্রতিনিধি অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে অনুষ্ঠানে চলমান রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বেশিরভাগ প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। এই মতবিনিময়ের কিছুক্ষণ আগেই ঢাকায় মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে তলব করে বাংলাদেশের উদ্বেগ জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল আহসান।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে সৃষ্ট সংকট মোকাবেলায় দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে যা যা করা প্রয়োজন, সবকিছুই করছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মিয়ো মিন্ট থানকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে আমাদের বক্তব্য জানিয়ে দিয়েছি। আরও যা যা করার আমরা করেছি। সাম্প্রতিক সংকট সৃষ্টির আগেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট এবং স্টেট কাউন্সিলরের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনায় রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীও এ ইস্যুতে কথা বলেছেন। আমি নিজেও পাঁচবার মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তার সবকিছুই খোলাখুলিভাবে আপনাদের জানানো সম্ভব নয়। আমরা সমস্যাটার মূলে সমাধান চেয়েছি। তিনি বলেন, এ ধরনের বাধ্যতামূলক স্থানান্তরের সঙ্গে নিয়মিত অভিবাসনকে মেলানো ঠিক নয়। নিয়মিত অভিবাসনে এভাবে ঘরবাড়ি ছেড়ে পরিবার নিয়ে কেউ পালিয়ে যায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত আছেন। এবং রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। যদিও প্রধানমন্ত্রী এ সংকট সৃষ্টির পরে মিয়ানমারে কারও সঙ্গে কথা বলেননি।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, জিএফএমডি’র সঙ্গে এ বিষয়টি মেলানো ঠিক হবে না। জিএফএমডি একটি বৈশ্বিক সম্মেলন, এ বছর যেটি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগের বছর তুরস্কে এবং আগামী বছর জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, এবারের জিএফএমডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে, বিশ্ব সম্প্রদায় অভিবাসন ইস্যুতে এখন একটি গ্লোবাল কমপ্যাক্ট প্রণয়নে একমতে পৌঁছানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এটি বাংলাদেশের প্রস্তাবিক একটি বৈশ্বিক চুক্তি। এর মাধ্যমে অভিবাসন, শরণার্থী ও মানবপাচারবিষয়ক সমস্যার ব্যাপকভিত্তিক সমাধান খোঁজা হবে। ২০১৮ সালে বিশ্ব নেতারা এ চুক্তিটি অনুমোদন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এবারের জিএফএমডিতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন ও তুরস্কের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হচ্ছে। জিএফএমডি মূল সম্মেলনের আগে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা দু’দিনব্যাপী আলোচনায় অংশ নেবেন। এবারের সম্মেলনে কানেকটিভিটি ইস্যুকেও অভিবাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। যা নিয়ে ইতিমধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে।
তথ্য সূত্র- দৈনিক যুগান্তর
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
https://www.facebook.com/messages/t/100008406966997